আমাদের অনেকেরই দেখা যায় ত্বক সাদা হয়ে যায় আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ত্বক সাদা হয়ে যাওয়াকে ভিটিলিগো বলে। ত্বকের এই শ্বেতির সাদা দাগ সমস্যাটি জীবন সংহারি নয় এবং ছোঁয়াচেও নয়।
হাত, পা, মুখ, ঠোঁট, চোখের চারপাশ সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এটি হতে পারে। ত্বকের এই সমস্যাটির সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অটোইমিউন ডিজঅর্ডারের কারণে এমন হতে পারে। যার ফলে ইমিউন সিস্টেম নিজেই মেলানিন উৎপন্নকারী কোষকে অর্থাৎ মেলানোসাইটকে আক্রমণ করে। এছাড়াও অন্য যে কারণগুলোকে দায়ী করা যায় সেগুলো হল- জিনগত প্রবণতা, স্ট্রেস, ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি ও সূর্যরশ্মির প্রভাব ইত্যাদি। এছাড়াও ছত্রাকের সংক্রমণ, একজিমা, সোরিয়াসিস ও ত্বকের অন্য সমস্যার কারণেও হতে পারে।
শ্বেতি রোগটি বিব্রতকর একটি রোগ যা ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। ত্বকের সাদা দাগ দূর করা বেশ কঠিন। তবে নিরাশ হবেন না প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে শ্বেতি নিরাময় করা সম্ভব। শ্বেতি রোগের কারণ শনাক্ত করা ও এর লক্ষণ বিশ্লেষণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন বয়সের মানুষেরই ভিটিলিগো হতে পারে। তবে গাড় ত্বকের মানুষদের হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।বিবর্ণ ত্বকের রি পিগমেন্টেশন ঘটাতে পারে করটিকো স্টেরয়েড ক্রিম। এই ক্রিমের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেমন- ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া ও মুখে রেখার সৃষ্টি হয়। যাদের ত্বকের অল্প স্থানে বিবর্ণতা দেখা যায় তাদের ক্ষেত্রে ট্যাক্রোলিমাস এবং পিম্যাক্রোলিমাস অয়েন্টমেন্ট কার্যকরী প্রভাব রাখতে পারে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কিছুটা কম। এছাড়াও শ্বেতির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ফটোক্যামোথেরাপি, লাইট থেরাপি, লেজার থেরাপি, স্কিন গ্রাফটিং, ব্লিস্টার গ্রাফটিং এবং মাইক্রোপিগমেন্টেশন। এই সবগুলো পদ্ধতি কেমিক্যাল ও সার্জিকেল ট্রিটমেন্ট যা বেদনাদায়ক ও ব্যয়বহুল। কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমেও এই রোগটির মোকাবিলা করা যায়। জেনে নিন সেই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো সম্পর্কে।
নিম
ত্বকের সমস্যা দূর করতে চমৎকার কাজ করে নিম। রক্তকে বিশুদ্ধ করতে এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে নিম।কয়েকটি নিম পাতা থেঁতলে নিয়ে ঘোলের সাথে মিশান। এই মিশ্রণটি ত্বকের সাদা হয়ে যাওয়া অংশে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। কয়েক সপ্তাহ যাবত প্রতিদিন এটি ব্যবহার করুন
আদা
রক্ত সংবহনের উন্নতি ঘটায় আদা। এটি মেলানিনের নিঃসরণকেও উদ্দীপিত হতে সাহায্য করে। আক্রান্ত স্থানে আদার একটি টুকরা নিয়ে ঘষুন বা আদা থেঁতলে নিয়ে আদার রস কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। লাগানো ছাড়াও দিনে দুইবার আদা চা পান করতে পারেন।
লাল মাটি
লাল মাটিতে উচ্চমাত্রার কপার থাকে। আদার রসের সাথে লাল মাটি মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। ভালো ফলাফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই এটি ব্যাবহার করুন।
কপার
কপার মেলানিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তামার পাত্রে পানি সারারাত সাধারণ তাপমাত্রায় রাখুন। সকালে খালি পেটে এই পানিটুকু পান করুন। মেলানিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য রোজ এই পানি পান করুন।
নারিকেল তেল
ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ইনফ্লামেশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে নারিকেল তেল। এর পাশাপাশি মেলানিনের গঠনেও সাহায্য করে নারিকেল তেল। দুই সপ্তাহ যাবত দিনে ২-৩ দিন ব্যবহার করে দেখুন উন্নতি দেখতে পাবেন।
যাদের শ্বেতি রোগ আছে তাদের জাম জাতীয় ফল খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে । কারণ এই ধরণের ফলে হাইড্রোকুইনন থাকে যা প্রাকৃতিক রঞ্জকরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন বি ১২, ফলিক এসিড ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার খান। রেড মিট ও সি ফুড খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে।