ত্বক আদৌ কি ফর্সা করা যায়? টিভি খুললে বা বিলবোর্ডের দিকে তাকালেই চোখে পড়বে ত্বক ফর্সা করার চটকদারি বিজ্ঞাপন। অনেকে প্রশ্নও করেন, ত্বক কি আসলেই ফর্সা করা যায়? তাদের যুক্তি টেলিভিশনে একাধিক লেজার ও এসথেটিক সেন্টার থেকে বলা হয়, ত্বক ফর্সা করার জাদু আছে তাদের কাছে। আসলেই এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো সদুত্তর নেই।
সবার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, মানুষের ত্বক কালো বা ফর্সা হওয়ার কারণ কী। আমাদের ত্বকে আছে মেলানিন নামক এক ধরনের পদার্থ, যা ত্বকের রঙ নির্ধারণ করে। যার শরীরে মেলানিনের পরিমাণ যত বেশি, তার ত্বক তত কালো। সত্যিকথা বলতে কি, এ মেলানিন কমানোর চিকিৎসা বা ওষুধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। সায়ন্টিফিক্যালি কেউ দাবিও করেনি যে, ত্বক ফর্সার ওষুধ আবিষ্কার করেছে। প্রশ্ন আসে, বাজারে ত্বক ফর্সা করার অনেক ধরনের লোশন বা ক্রিম পাওয়া যায়। দেখতে হবে সেগুলো তৈরিতে ব্যবহৃত টেকনোলজি এবং কেমিক্যাল কীভাবে কাজ করে, তার ব্যাখ্যা আছে কিনা।
তবে কেউ যদি বলেন ত্বক উজ্জ্বল করা যায়, মুখের কমপ্লেক্সশন ভালো করা যায়, তাহলে ঠিক আছে। তা মেনে নেওয়া যায়। ত্বক তিনভাবে উজ্জ্বল করা যায়
ক. লেজার ব্রাইটেনিং
খ. কেমিক্যাল ব্রাইটেনিং এবং
গ. কসমেটিক ব্রাইটেনিং।
তবে এসব পদ্ধতি অত্যন্ত সাময়িক। স্থায়ী কোনো ব্রাইটেনিং পদ্ধতি নেই। যারা সাময়িকভাবে ত্বক উজ্জ্বল করতে চান, তাদের অবশ্যই জেনে নিতে হবে কী দিয়ে ব্রাইটেনিং করা হচ্ছে, কতদিন লাগবে, কত টাকা খরচ হবে এবং সর্বোপরি কতদিন ত্বকের এই উজ্জ্বলতা থাকবে। এসব না জেনে কোথাও প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক নয়। রোগী হিসেবে অবশ্যই আপনার অধিকার আছে প্রশ্ন করে সব জেনে নেওয়ার।
ত্বক ফর্সায় গাজরের ভূমিকা : আমাদের দেশে অনেক বেশি গাজর উৎপাদিত হয়। এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ বা বিটাক্যারোটিন, যা চোখসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য উপকারী। ইদানীং অনেক নারী রূপচর্চার উপাদান হিসেবে গাজর বেটে মুখ ও ত্বকে ব্যবহার করে থাকেন। তাদের ধারণা, গাজরবাটা লাগালে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়। এমনকি বেশিরভাগ বিউটিশিয়ান রূপচর্চার ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রসূত ত্বক ফর্সায় গাজরের কথা বলে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন একেবারেই উল্টো গাজর ত্বক ফর্সা করে না, বরং কালো করে। কারণ ত্বক ফর্সাকারী মেলানিন যার শরীরে যত বেশি, তার ত্বক তত কালো। গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকের মেলানিন উজ্জীবিত করে রক্তের বিলিরুবিন, হিমোগ্লোবিন ও বিটাক্যারোটিন। আর গাজরে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটাক্যারোটিন। তাই গাজর যেভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন, ত্বক ফর্সা হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এমনকি চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতেও গাজরবাটার কোনো ভূমিকা নেই। তবে গাজরের বিটাক্যারোটিন হার্টের জন্য উপকারী।