ত্বকের সমস্যার ভোগা বেশিরভাগ মানুষেরই তৈলাক্ত ত্বক। ত্বক নিয়ে বেশী সমস্যায় পড়েন তারা, যাদের ত্বক তৈলাক্ত। শীতে সমস্যা কিছুটা কমলেও এ থেকে নিস্তার পাওয়ার খুব ভালো উপায় যে আছে সেটিও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তেল চিটচিটে ভাবের জন্য মুখে কোনো কিছুই মানায় না। মানুষের শরীর স্বাভাবিক উপায়ে তেল উৎপাদন করে যা ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখে। কিন্তু কোনও জিনিসই যেমন অতিরিক্ত ভাল না, তেমনই অতিরিক্ত তেলও ত্বকের জন্য ভাল না।ভালো ফেসওয়াশ, দামী ফেসিয়াল ইত্যাদি যত যাই করুন না কেন, তৈলাক্ত ত্বক থেকে মুক্তি মেলে না। কিছুক্ষণ পরই ফিরে আসে তেল চিটচিটে ত্বক আর আপনার মলিন হওয়া চেহারা। তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সারা বছরই প্রাকৃতিক উপাদানই বেছে নেওয়া উচিৎ রুপচর্চা ও যত্নের প্রয়োজনে।
সবসময় মুখ ধোয়া বন্ধ করুন
ত্বককে রক্ষা করার জন্য শরীর সিবাম নামের একটি পদার্থ উৎপাদন করে যা ত্বককে রক্ষা করে। বারবার মুখ ধুলে প্রয়োজনীয় তেল ধুয়ে যায়। সিবামের অভাবে আবারও তেল উৎপন্ন হয়। যা ত্বককে তৈলাক্ত করে।
লবণের স্প্রে
লবণের রয়েছে ভেতর থেকে ত্বকের তেল-ময়লা দূর করার ক্ষমতা। তাই এটা খুব কার্যকরী ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করতে। একটি স্প্রে বোতলে ১ কাপ পানি নিয়ে এতে ১ টেবিল চামচ লবণ গুলে নিন। এরপর এই লবণ পানি স্প্রে করুন মুখে। বিশেষ করে যে স্থানটি বেশী তৈলাক্ত। খানিকক্ষণ রেখে দিন। এরপর টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। প্রতিদিন এভাবে করলে অনেকাংশে ত্বকের তৈলাক্ততা কমে আসবে।
লেবু
সবসময় হাতের কাছে পাওয়া এই বস্তুটি তৈলাক্ত ত্বকে দারুণভাবে কার্যকর। দ্রুত ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূরীকরণে লেবু বেশ ভালো কাজ করে। তবে একেবারে সরাসরি ত্বকে লেবু ব্যবহার করা কখনোই উচিৎ নয়। এতে লেবুর সাইট্রিক এসিড ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মুখে লাগান, প্যাকটি শুকিয়ে শক্ত হয়ে এলে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
টমেটো পিউরি
তৈলাক্ত ত্বক থকে রেহাই পাবার সবচাইতে সহজ উপায় হচ্ছে টমেটো পিউরির ব্যবহার। টমেটো ত্বকের তৈল গ্রন্থি শুকোতে সাহায্য করে। ফলে স্থায়ীভাবে তৈলাক্ত ত্বক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বাসায় টমেটো সেদ্ধ করে ব্লেড করে নিয়ে টমেটো পিউরি বানিয়ে নিন। এরপর এই পিউরি মুখে লাগিয়ে রাখুন ৫-৭ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ততা দূর হবে সহজেই।
শসা ও লেবুর রসের ব্যবহার
ত্বকের তৈলাক্ততা তুড়ি বাজিয়ে দূর করতে চাইলে ব্যবহার করুন শসা ও লেবুর রস। শসা কেটে চিপে রস বের করে নিন। এরপর একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ শসার রস নিয়ে এতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি একটি তুলোর বলের সাহায্যে পুরো ত্বকে ভালো করে লাগান। ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শসার রস ত্বকের নিচের তেল গ্রন্থি থেকে তেল বের করে তৈলাক্ততা দূর করে। এবং লেবুর রস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ব্রণ হবার সম্ভাবনা কমায়। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
দুধ
আরেকটি দৈনিন্দন সহজলভ্য বস্তু হলো দুধ। তুলায় দুধ ভিজিয়ে নিয়ম করে প্রতিদিন দুইবার ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া দুধের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে ত্বক পরিষ্কার হয়ে যাবে।
অ্যালোভরা
অ্যালোভেরার জেল দিনে ২-৩ বার লাগান। এবং শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। তবে এক্ষেত্রে জেলটি ব্যবহার করার আগে রেফ্রিজারেটরে রাখলে আরও ভাল কাজ দেবে।
চন্দন ও হলুদ
যুগ যুগ ধরেই সৌন্দর্য চর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে হলুদ ও চন্দন। চন্দন ও হলুদের গুড়া একসাথে লেবুর রসের সাহায্যে মিশিয়ে নিন। এরপর এরপর প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখুন দশ থেকে পনের মিনিট। ত্বক থেকে তেলভাব দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে এই প্যাকটি।
প্রাকৃতিক ফেসওয়াশ
যতোটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ ব্যবহারের চেষ্টা করুন। কারণ কেমিক্যাল সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ তৈলাক্তটা বাড়িয়েতোলে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেসওয়াশ বাজারে পাওয়া যায়, তা বেছে নিতে পারেন। অথবা ঘরে তৈরি করে নিতে পারেনলেবু ও চিনির ফেসিয়াল স্ক্রাব।
মনে রাখবেন , তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সাধারণ পানির বদলে ফিল্টার করা পানি বা ফুটানো পানি ব্যবহার করাই ভালো। তৈলাক্ত ত্বকে খুব বেশী প্রসাধনী ব্যবহার না করাই ভালো, এতে ব্রণের সমস্যা বাড়ে।